SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা - প্রমিত ভাষায় কথা বলি | NCTB BOOK

নিচে একটি গল্প দেওয়া হলো। গল্পের নাম ‘কত দিকে কত কারিগর’। এটি সৈয়দ শামসুল হকের (১৯৩৫- ২০১৬) লেখা। সৈয়দ শামসুল হক কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও নাটক রচনা করেছেন। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখার কারণে তাঁকে সব্যসাচী লেখক বলা হয়। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে আছে-‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন' ইত্যাদি। তিনি সিনেমার জন্যও কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান লিখেছেন।

‘কত দিকে কত কারিগর' গল্পটি পড়ার সময়ে প্রমিত উচ্চারণের দিকে খেয়াল রেখো।

                                                  কত দিকে কত কারিগর

                                                                                       সৈয়দ শামসুল হক

নদী পার হয়ে, ওপারে কুমোরদের একটা গ্রামের ভেতরে সারাদিন দেখছি ওদের মাটির কাজ। হাঁড়ি পাতিল সরা সানকি তৈরি করছে ওরা। বেশি কৌতূহল নিয়ে দেখেছি পাটার কাজ। মাটির পাটায় ফুলের নকশা, রবীন্দ্রনাথ, বেণীবন্ধনরত যুবতীর চিত্র, জয়নুলের আঁকা গরুর চাকা ঠেলে তোলার প্রতিলিপি, উড়ন্ত পরি, ময়ূরপঙ্খি নৌকার চিত্র, চোখ বুজে নজরুল যে বাঁশি বাজাচ্ছেন, সেই ফটোগ্রাফের নকল। বাঁশবনে আচ্ছন্ন শীতল একটি গ্রামে, অবিশ্বাস্য ঝিম ধরা নীরবতার ভেতরে, সবুজ শ্যাওলা ধরা কুমোরদের প্রাঙ্গণে সার দিয়ে সাজানো রবীন্দ্রনাথ নজরুল, জয়নুল।

আজকাল এগুলোর বিক্রি ভালো। সস্তায় ঘরের দেয়াল সাজাবার জন্যে অনেকেই কেনে। একেকটা চিত্রের জন্যে কাঠের ওপর খোদাই করা নকশা আছে। তার ওপর কাদার তাল টিপে টিপে পাটা তৈরি করছে ওরা। কাদার তালে ফুটে উঠছে নকশা। বাঁশের কলম দিয়ে সংশোধন করে পাটাগুলো ভাঁটিতে পোড়াবার জন্যে তৈরি করা হচ্ছে।

কাজ করছে যারা তাদের ভেতরে কিশোর বেশ কয়েকজন। যুবক দুজন। আর একপাশে উঁচু পিঁড়ির ওপর উবু হয়ে বসে কাজের তদারক করছেন বৃদ্ধ পালমশাই। মাথায় টাক। কানের দুপাশে সাদা এক খামচা করে চুল। তিনি শ্যেন চোখে কারিগরদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছেন।

—এইও। করলি কী! আরে দামড়া!

কারিগর ছোকরা এতগুলো। কাকে দামড়া বলে সম্বোধন করলেন, বুঝতে পারলাম না। কিন্তু বুঝেছে ঠিক যাকে বলা হয়েছে সে। দেখলাম, সে ছোকরা চোখ না তুলেই চট করে একটিপ মাটি নিয়ে ময়ূরপঙ্খি নৌকায় বসা মহারাজ ধরনের মূর্তিটির মুকুটে লাগাল।

পালমশাই আমার দিকে ফিরে হেসে বললেন, নজর না রাখলে কাম সারা। দ্যাখলেন না? চান্দ সওদাগরের মুকুটটা যে ছাঁচে ওঠে নাই, ব্যাটার খ্যাল নাই। বলেই ‘উঁহুহু’ করেই নিজেই উঠে গেলেন ছোকরার কাছে।

তারপর ছোকরার হাত থেকে বাঁশের চিকন কলমটা খপ করে টেনে নিয়ে মুকুটের ওপর অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে চিকন নকশা এঁকে দিলেন।

- জ্যাঠা।

পেছন থেকে ডাক শুনে বিরক্ত হয়ে ঘুরে তাকালেন পালমশাই।

ব্যাস আর কোনো কথা নয় কারো তরফে। ঘুরে তাকিয়ে তিনিও বুঝতে পারলেন, যে ছোকরা ডাক দিয়েছিল সেও মাথা নিচু করে বসে রইল সমুখের কাঁচা মাটির পাটার দিকে তাকিয়ে।

আরে, দামড়া! রবীন্দ্রনাথের দাড়িতে ঢেউ খেলানো কয়বার দেখাইয়া দিতে অয়? আমার দিকে ফিরে বললেন, বোঝলেন, এই দাড়ি তো বাংলার সক্কলে চেনে। চেনে মানে, ছায়া দেখলেও চেনে। খালি ছায়া দিয়াই বুঝান যায় রবীন্দ্রনাথ। তাইলে বোঝেন, সেই কবির দাড়িই যদি ঠিক না অয়, দাড়ি দেইখা যদি লালন ফকির মনে হয়, কি মাওলানা ভাসানী মনে হয়, তাইলে চলব?

আবার দ্রুত হাত চলে পালমশাইয়ের। মহাবিরক্ত হয়ে তিনি কাঁচামাটির পাটায় রবীন্দ্রনাথের দাড়িতে সূক্ষ্ম আঁচড় কেটে চলেন। আঁচড় কাটতে কাটতে আমাকে বলেন, বোঝলেন, কাঠের ছাঁচে সকল টানটোন ছাপছোপ ঠিক ওঠে না। হাতে ঠিক করতে অয়। নইলে মাল নষ্ট। পয়সা নষ্ট। তার উপর ধরেন, ভাঁটি থিকা বাইর করলেও কিছু বাদ-বাতিল হয়া যায়।

জয়নুলের আঁকা গরুর গাড়ির চাকা ঠেলে তোলার ছবির দিকে দেখিয়ে পালমশাইকে জিগ্যেস করি, এটা কার ছবি?

-ক্যান? মানুষ চাকা ঠেইলা তোলে—সেই ছবি।

-সে কথা নয়। কার আঁকা ছবি?

পালমশাই একটু ইতস্তত করে বললেন, ধরেন, আমাগো আঁকা।

আমি হেসে বললাম, পালমশাই, এটা জয়নুল আবেদীনের আঁকা।

শুনে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর নিরাসক্ত গলায় বললেন, হ, হইতে পারে। কেটা জানে! কত দিকে কত কারিগর আছে। জয়নাল না কী কইলেন? নাম মনে থাকে না। তারপর ধরেন গিয়া, আমরা যে আর্টের কাম করি, আমাগো চেনে কয়জন? নাম জানে কয়জন? এই যে আমার বাবায়, তানি ছিলেন এতবড়ো আর্টিস্ট, কে তারে স্মরণ রাখছে কন? তারপর একটু চুপ থেকে বললেন, জয়নাল? হ, হইতে পারে। তয়, এই নকশাটা খুব চলছে।

জিগ্যেস করলাম, আচ্ছা, এটা তো রবীন্দ্রনাথ। ওটা কবি নজরুল-বাঁশি বাজাচ্ছেন।

পালমশাই সন্দিগ্ধ চোখে একবার আমার, একবার পাটা দুটোর দিকে তাকালেন। ভাবলেন, হয়তো চেহারা ঠিক মেলেনি। বললেন, ক্যান, কী হইছে?

–না, ঠিকই আছে। আমি শুধু জানতে চাইছি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছবি করেন না?

-বঙ্গবন্ধু?

- হ্যাঁ।

–ক্যান, দ্যাহেন নাই-ঐ যে উপরে চাইয়া দেহেন-সবার উপরেই তো বঙ্গবন্ধুর দুইডা ছবি। হেরে তো মধ্যে বা নিচে রাহন যায় না।

এতক্ষণ মুঠোতে ধরে রাখা চশমাটা এবার চোখে দিলাম। সত্যি, বঙ্গবন্ধুকে এই কারিগর স্থান দিয়েছেন সবার ওপরে। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এল।

 

শব্দের অর্থ

অবিশ্বাস্য: যা বিশ্বাস করা যায় না।                                                       তরফ: পক্ষ।

আঁচড়: দাগ টানা।                                                                               দামড়া: বলদ গরু।

আর্ট: ছবি আঁকা ও অন্যান্য শিল্প।                                                        নিরাসক্ত: আবেগহীন, নির্লিপ্ত।

আর্টিস্ট: শিল্পী।                                                                                   পাটা: মাটির ফলক। 

ইতস্তত: দ্বিধা।                                                                                    বাঁশবনে আচ্ছন্ন: বাঁশগাছ দিয়ে ভরা।

এক খামচা চুল: পাঁচ আঙুলের এক খামচিতে তোলা একমুঠ চুল।        বেণীবন্ধনরত: বেণী বাঁধছে এমন।

একটিপ: একটুখানি।                                                                          ভাঁটি: মাটির তৈরি জিনিস পোড়ানোর বড়ো চুলা।

কাদার তাল: কাদার পিন্ড।                                                                  ময়ূরপঙ্খি নৌকা: যে নৌকার সামনের দিকটা 

কারিগর: যাঁরা হাতে জিনিস বানান।                                                                              ময়ূরের মুখের মতো নকশা করা।

কুমোর: মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানো যাঁদের পেশা।                     মওলানা ভাসানী: বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত

কৌতূহল: অবাক, জিজ্ঞাসা।                                                                                          রাজনীতিবিদ।

খোদাই করা নকশা: কেটে কেটে বানানো নকশা ।                            লালন ফকির: বাংলা ভাষার একজন বিখ্যাত 

চান্দ সওদাগর: বেহুলা-লখিন্দরের কাহিনির একটি চরিত্র।                                         লোককবি ও গায়ক।

ছাঁচ: কোনো কিছু বানানোর কাঠামো।                                                শ্যেন: তীক্ষ্ণ, বুনো।

ছোকরা: ছেলে।                                                                                 সন্দিগ্ধ: সন্দেহ ভরা ।

জয়নুল আবেদীন: বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী।               সমুখের: সামনের

জ্যাঠা: চাচা।                                                                                      সরা: মাটির ঢাকনা 

ঝাপসা: অস্বচ্ছ, অস্পষ্ট।                                                                    সানকি: মাটির থালা । 

সূক্ষ্ম: মিহি, সরু।

 

শব্দের উচ্চারণ

প্রমিত ভাষায় শব্দের উচ্চারণ ঠিকমতো করতে হয়। ‘কত দিকে কত কারিগর' গল্প থেকে কিছু শব্দ বাম কলামে দেওয়া হলো। শব্দগুলোর উচ্চারণে অনেক সময় ভুল হয়, সেটি মাঝের কলামে দেখানো হয়েছে। আর প্রমিত উচ্চারণ কেমন হবে, তা ডানের কলামে লিখে দেখানো হয়েছে। তোমার উচ্চারণ এখান থেকে ঠিক করে নাও ।

আঞ্চলিক ভাষা

‘কত দিকে কত কারিগর' গল্পে পালমশাইয়ের কথায় আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। নিচের ছকের বাঁ কলামে পালমশাইয়ের মুখের বাক্য লেখো, আর ডান কলামে বাক্যগুলোকে প্রমিত ভাষায় রূপান্তর করো। একটি করে দেখানো হয়েছে।

আঞ্চলিক বাক্যপ্রমিত রূপ
ক্যান, কী হইছে?কেন, কী হয়েছে?
  
  
  
  
  
  
  
  

প্রমিত ভাষার চর্চা

আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রগুলোতে আমরা প্রমিত ভাষায় কথা বলব। শ্রেণিতে নিচের বিষয়গুলো নিয়ে প্রমিত ভাষায় কথা বলার অনুশীলন করো।

১. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা 

২. একুশে ফেব্রুয়ারি, ছাব্বিশে মার্চ, ষোলই ডিসেম্বর বা অন্য কোনো দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা 

৩. খবর পাঠ 

৪. নিজের কোনো অভিজ্ঞতার উপস্থাপন 

৫. লাইব্রেরিয়ান, ডাক্তার বা অন্য কোনো লোকের সাথে আলাপ ।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.